দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় বিশ্বজুড়ে হাই ব্লাড প্রেসার একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত এবং আরও অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও বিপুল সংখ্যক মানুষ হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ তথা হাইপারটেনশনে ভুগে থাকেন দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায়।
আমরা অনেকেই জানি যে, উচ্চ রক্তচাপ কমাতে খাবারে লবণের ব্যবহার সীমিত করতে হয়। কিন্তু এখানেই শেষ, এটা কেবল শুরু। প্রকৃতপক্ষে, সংবহনতন্ত্রকে (সার্কুলেটরি সিস্টেম) সুস্থ রাখতে আরো কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ওষুধই একমাত্র সমাধান নয়, আমরা চাইলে প্রাকৃতিক উপায়েও রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি। আমাদের জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে ওষুধ ছাড়াই রক্তচাপ কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। এখানে প্রাকৃতিক উপায়ে রক্তচাপ কমানোর উপায় দেয়া হলো।
আরো পড়ুনঃ গোপনাঙ্গ ফর্সা করার ক্রিম কিনতে ক্লিক – এখনই কিনুন
হাঁটতে বের হোন: এক্সারসাইজ বা শরীরচর্চা হার্টের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে, যার ফলে এটি আরো কার্যকরভাবে রক্ত পাম্প করতে পারে, বলেন জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সেথ মার্টিন। তিনি জানান, ‘হাঁটলে ধমনী শিথিল হতে পারে। এর ফলে রক্ত পাম্পিংয়ে হার্টকে জোরদবস্তি করতে হয় না বলে রক্তচাপ কমে।?
দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায়
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন প্রতিসপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট এমন শরীরচর্চা করতে পরামর্শ দিয়েছে যা হার্টের পাম্পিং কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। চিন্তা করবেন না, এর জন্য শরীর থেকে ঘাম ঝরাতেই হবে এমনকোনো কথা নেই। আপনি হাঁটার মতো সহজ শরীরচর্চাতেও রক্তচাপ কমাতে পারবেন। হাইপারটেনশন নামক জার্নালে ২০১৯ সালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, সকালে ৩০ মিনিট হাঁটলে এটা দিনের বাকি সময়ে রক্তচাপ কমাতে ওষুধের মতোই কাজ করতে পারে।
পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান: প্রচুর পটাশিয়াম রয়েছে এমন খাবার খেলেও রক্তচাপ কমতে পারে। এর কারণ হলো, পটাশিয়াম লবণের প্রভাব কমায়। আপনি যত বেশি পটাশিয়াম খাবেন, প্রস্রাবের মাধ্যমে তত বেশি লবণ বেরিয়ে যাবে। পটাশিয়াম রক্তনালীর প্রাচীরকে টানটান প্রসারণ থেকেও মুক্ত করতে পারে। এটাও রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। তাই হাইপারটেনশনে ভুগলে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন, যেমন- বিনস, পালংশাক, কিসমিস ও কলা।
ব্যালেন্সড ডায়েট অনুসরণ করুন: প্রাকৃতিক উপায়ে রক্তচাপ কমাতে চাইলে খাদ্যতালিকায় ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, অর্থাৎ ব্যালেন্সড ডায়েটের ওপর থাকতে হবে। সবসময় কেবল একজাতীয় খাবার খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ যেমন অসম্ভব হতে পারে, তেমনি শরীর পুষ্টিহীনতায়ও ভুগতে পারে। তাই খাদ্যতালিকাকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করার চেষ্টা করতে হবে। আপনার খাদ্যতালিকায় ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য, কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার, চামড়াবিহীন মুরগির মাংস, মসুর ডালের মতো লেগিউম ও নন-ট্রপিক্যাল ভেজিটেবল অয়েল অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। এই ডায়েট অনুসরণে দু’সপ্তাহের মধ্যে উপকার পেতে শুরু করবেন, এমনটাই অভিমত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
ধূমপান ছেড়ে দিন: আমরা সবাই জানি যে ধূমপান হলো হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকিময় বিষয়। কেবল তা নয়, গবেষকরা রক্তচাপের সঙ্গেও ধূমপানের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। গবেষকদের মতে, যখন কেউ ধূমপান করেন, সিগারেটের নিকোটিন স্বল্পমেয়াদে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। সময়ের আবর্তনে ধমনী অনমনীয় হয়ে দীর্ঘমেয়াদে রক্তচাপ বাড়াতে পারে। ধূমপানের সময় ধূমপায়ীর কাছে থাকলেও ধমনীর ভেতর চর্বিময় পদার্থের প্রতিবন্ধকতা গঠনের ঝুঁকি বাড়ে। এ প্রক্রিয়ায়ও রক্তচাপ বাড়তে পারে।
বসা থেকে বিরতি নিন: গবেষণায় দীর্ঘসময় বসে থাকার সঙ্গে অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার যোগসূত্র পাওয়া গেছে, যেমন- স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ রক্ত শর্করা, কোমরে মেদ জমা ও উচ্চ কোলেস্টেরল। ২০১৮ সালে জার্নাল অব অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণা ধারণা দিয়েছে, যাদের হাইপারটেনশন রয়েছে তারা দীর্ঘসময় বসে না থেকে হালকা শরীরচর্চা করলে রক্তচাপ কমে যাবে। যাদেরকে দীর্ঘসময় বসে কাজ করতে হয় তারা যেন প্রতি আধ ঘণ্টায় ওঠে দাঁড়ায়, হাঁটে অথবা হালকা শরীরচর্চা করে।
চা পান করুন: অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, চা পানে রক্তচাপ কমে। ২০১৭ সালে জার্নাল অব নিউট্রিশন, হেলথ অ্যান্ড অ্যাজিংয়ে প্রকাশিত চীনের ৪,৫০০ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর পরিচালিত গবেষণাও একই কথা বলছে। রক্তচাপ সম্পর্কিত উপকারিতা পেতে কোন চা পান করা উচিত তা ভাবছেন? নিউট্রিয়েন্টস নামক জার্নালে ২০১৯ সালে প্রকাশিত গবেষণা রিভিউ অনুসারে- গ্রিন টি অথবা ব্ল্যাক টি যেটাই পান করেন না কেন, রক্তচাপ কমবে।
কফি সীমিত করুন: কারো উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তিনি যত ইচ্ছে কফি পান করতে পারবেন না, এক্ষেত্রে তাকে পরিমিতিবোধের পরিচয় দিতে হবে।এক্সপার্ট রিভিউ অব কার্ডিওভাস্কুলার থেরাপিতে ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি বড় গবেষণা রিভিউ অনুসারে, উচ্চ রক্তচাপে ভুগলে কফি পানের অভ্যাস কমানো উচিত। গবেষকরা জানান, কফি পানের পর তিন ঘণ্টা পর্যন্ত রক্তচাপ বাড়তে পারে।
মেডিটেশন চর্চা করুন: জার্নাল অব হিউম্যান হাইপারটেনশনে ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা ধারণা দিয়েছে, নিয়মিত মেডিটেশন চর্চাতে রক্তচাপ ও মানসিক চাপ কমতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের জন্য একটি বিশেষ করণীয় হলো, জীবন থেকে মানসিক চাপ কমিয়ে ফেলা। মানসিক চাপ সম্পূর্ণরূপে দূর করা সম্ভব নাও হতে পারে, কিন্তু যতটা সম্ভব কমানোর চেষ্টা করতে হবে।’ প্রতিদিন শান্ত পরিবেশে কিছুসময় মেডিটেশনে রত থেকে রক্তচাপ ও মানসিক চাপ দুটোই কমাতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ মোটা হওয়ার ইন্ডিয়ান গুড হেলথ কিনতে ক্লিক – এখনই কিনুন
আরো পড়ুনঃ লম্বা হওয়ার ঔষধ কিনতে ক্লিক- এখনই কিনুন
খাদ্যতালিকায় তিসি বীজ রাখুন: ২০১৫ সালে দ্য জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত গবেষণা রিভিউ বলছে, তিসি বীজ খেলে রক্তচাপ কমতে পারে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা ১২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তিসি বীজ খাওয়াতে বড় ধরনের উপকার পেয়েছেন, অর্থাৎ উল্লেখযোগ্য হারে রক্তচাপ কমেছে। আপনার সকালের নাশতা ওটমিল বা ইয়োগার্টের ওপর তিসি বীজ ছিটিয়ে খেতে পারেন। দিনের অন্যসময়ে স্যূপ বা সালাদের সঙ্গে তিসি বীজ খেতে পারেন।
দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায়
লবণের ব্যবহার কমান: স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খোঁজখবর যারা রাখেন তাদের কাছে এটা সম্ভবত অজানা নয় যে, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ লবণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৯ সালে নিউট্রিয়েন্টসে প্রকাশিত গবেষণা মতে- খাবারে লবণের পরিমাণ কমালে কেবল রক্তচাপ কমে না, হার্ট ও রক্তনালী সংশ্লিষ্ট রোগের ঝুঁকিও কমে। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের প্রতিদিন মাত্র ৫০০ মিলিগ্রাম লবণ দরকার হয়। ডায়েটারি গাইডলাইনস ফর আমেরিকানস দৈনিক ২,৩০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ খেতে নিষেধ করেছে, যা প্রায় এক চা চামচের সমান।
সুস্থ শরীরের ওজন বজায় রাখুন। এটি সুস্থ থাকার প্রথম পদক্ষেপ। ব্যায়াম করুন নিয়মিত। স্বাভাবিক রক্তচাপ বজায় রাখতে আপনার ওজন ও কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখুন।
নিজেকে শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখুন। নিয়মিত ওয়ার্কআউট উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায় ও হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে। দৈনিক আপনার রুটিনে অন্তত আধা ঘণ্টা শরীরচর্চা রাখুন।
প্রক্রিয়াজাত ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। চর্বিযুক্ত খাবার, ধূমপান, শারীরিক কার্যকলাপের অভাব ও প্রক্রিয়াজাত খাবার উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।