মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথম রোজা রাখেন কে

মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথম রোজা রাখেন কে

মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথম রোজা রাখেন কে ইসলাম ভিত্তি পাঁচটি জিনেসের ওপর প্রতিষ্ঠিত । রোজা তার একটি । এ রোজা শুধু উম্মতে মুসলিমার ওপর ফরজ হয়নি । আগের নবি- রাসুলদের জন্যও রোজার বিধান ছিল । কুরআনের নির্দেশনায় তা প্রমাণিত । কিন্তু দুনিয়ায় প্রথম কে রোজা রেখেছিলেন বা এর সংখ্যা কত ছিল? সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট দলিলভিত্তিক নির্দেশনা অস্পষ্ট হলেও কুরআনের নির্দেশনা এমন-

মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথম রোজা রাখেন কে

হে ঈমাদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে । যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমারে আগের লোকদের( নবি- রাসুল ও তাদের উম্মত) ওপর । যাতে তোমরা পরহেজগার হতে পার । ’( সুরা বাকারা আয়াত ১৮৩)

এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, রোজা হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগের নবি- রাসুলদের জন্যও ফরজ ছিল । সে হিসেবে প্রথম নবি ও প্রথম মানুষ হজরত আদম আলাইহিস সালামই হবেন প্রথম রোজা পালনকারী ।

কিন্তু কে প্রথম রোজা রেখেছিলেন কিংবা এ রোজা সংখ্যা কয়টি ছিল এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট দলিলভিত্তিক ঘোষণা না থাকলেও হজরত আব্দুল কাদের জিলানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহিসহ সুফি- সাধকরা কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন । তাহলো-

মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথম রোজা রাখেন কে


সুফি- সাধকদের মতে, হজরত আদম আলাইহিস সালাম যখন নিষিদ্ধ ফল খেয়েছিলেন এবং তারপর তাওবাহ করছিলেন, তখন ৩০ দিন পর্যন্ত তার তাওবা কবুল হয়নি । কারণ তাঁর দেহে নিষিদ্ধ ফলের নির্যাস রয়েগিয়েছিল । অতঃপর তাঁর দেহ যখন তা থেকে পাক- পবিত্র হয়ে যায়, তখন তাঁর তাওবাহ কবুল হয় । তারপর তাঁর সন্তানদের ওপরে ৩০ রোজা ফরজ করে দেয়া হয় ।

হজরত ইবনে হাজার আসকালানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ বর্ণনার প্রমাণে সনদ নেই । এর কোনো দলীল পাওয়াও কঠিন ব্যাপার ।( ফতহুল বারি)

  • দুনিয়ায় প্রথম রোজা পালন সম্পর্কে হজরত আব্দুল কাদের জিলানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হজরত যির ইবনে হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আইয়্যামে বিজ( চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘ আল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিস সালামকে একটি ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন । কিন্তু আদম আলাইহিস সালাম সেই ফল খেয়ে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় নেমে আসতে বাধ্য হন । সে সময় তাঁর শরীরের রং কালো হয়ে যায় । ফলে তাঁর দুর্দশা দেখে ফেরেশতারা কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন-

হে আল্লাহ! আদম আপনার প্রিয় সৃষ্টি । আপনি তাঁকে জান্নাতে দিয়েছিলেন । আমাদের দ্বারা তাঁকে সেজদাও করিয়েছেন । আর একটি মাত্র ভুলের জন্য তার দেহের রং কালো করে দিলেন?

তাদের এ আবেদনে আল্লাহ তাআলা হজরত আদাম আলাইহিস সালামের কাছে ওহি পাঠালেন- তুমি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখ । আদম আলাইহিস সালাম তাই করলেন । ফলে তাঁর দেহের রং আবার উজ্জ্বল হয়ে যায় । এ জন্যই এ তিনটি দিনকে আইয়্যামে বিজ বা উজ্জ্বল দিন বলা হয় । ’( গুনইয়াতুত ত্বলিবিন)

এ ঘটনায়ও কুরআন- সুন্নাহর কোনো ব্যাখ্যা বা মতামত সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপিত হয়নি । তবে হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে কিংবা সফরে থাকাকালীন সময়ে আইয়্যামে বিজ- এর রোজা রাখা থেকে বিরত থাকতেন না । ’( নাসাঈ, মিশকাত)

তবে এ কথা সুস্পষ্ট যে, রোজা শুধু উম্মতে মুহাম্মাদির ওপরই ফরজ হয়নি বরং আগের নবি- রাসুলদের ওপরও রোজার বিধান ছিল । কুরআনুল কারিমের ঘোষণাই এর প্রমাণ ।
উল্লেখ্য, রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান আসতে আর একমাসও বাকি নেই । তাই রমজানের রোজার প্রস্তুতি এখন থেকেই নেয়া জরুরি । বিশেষ করে এ শাবান মাসের রোজা রাখার মাধ্যমেই সে প্রস্তুতি শুরু করা উত্তম ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের রোজা পালনের প্রস্তুতি নেয়ার তাওফিক দান করুন । রমজানজুড়ে রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার তাওফিক দান করুন । আমিন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *